রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিবর্তনে সব দল একমত
আপলোড সময় :
১৯-০৬-২০২৫ ১০:৩৪:২৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১৯-০৬-২০২৫ ১০:৩৪:২৭ অপরাহ্ন
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কিভাবে হবে তা চূড়ান্ত না হলেও বর্তমান বিধান পরিবর্তনে সবাই একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
এছাড়া দ্বিকক্ষ আইনসভা নিয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। ১০০ সদস্য বিশিষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রেও একমত হয়েছে। তার মানে এই নয় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে আরও সংশ্লিষ্ট বিষয় রয়েছে, যেগুলো ঐকমত্য হলে পরে জানানো হবে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ শেষে বিকেলে তিনি এ কথা জানান।
টানা তৃতীয় দিনের বৈঠকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা শুরু করেছে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির ‘দোয়েল মাল্টিপাস হলে’ এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
কমিশনের সদস্যদের মধ্যে আছেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, আইয়ুর মিয়া, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা বৈঠকে অংশ নেন। বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমদ, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, অধ্যাপক রোরহান উদ্দিন খান; জামায়াতে ইসলামীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ; সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের বজলুর রশীদ, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এনসিপির হাসনাত আবদুল্লাহ; গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস; খেলাফত মজলিসের আহমেদ আবদুল কাদের; বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক; বাংলাদেশ জাসদের মুশতাক হোসেন, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, বিএলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আমাদের হাতে সময় এত স্বল্প, খুবই স্বল্প সময়। জুলাই মাসের মধ্যেই এটার একটা চূড়ান্ত পরিণতি জাতীয় সনদ তৈরি করতে হবে।
বৈঠক শেষে তিনি জানান, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল জানিয়েছে, আপাতত তিন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে যার সব কটিই ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনায় সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে প্রত্যেক রাজনৈতিক দল স্মরণ করিয়ে দেয় এর সঙ্গে পার্লামেন্টের দ্বিকক্ষ জড়িত। রাষ্ট্রপতি কীভাবে নির্বাচিত হবেন, সেক্ষেত্রে উচ্চকক্ষ কীভাবে হবে তার পেছনে আমরা দ্বিকক্ষ পার্লামেন্ট নিয়ে আলোচনা করেছি।
তিনি বলেন, আমাদের আলোচনায় বিভিন্ন রকম মত থাকলেও আলোচনাটি অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে হচ্ছে। প্রত্যেকেই মতামত দিচ্ছে। আজকে আমরা সবাই একমত হয়েছি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের যে পদ্ধতি রয়েছে তা পরিবর্তন হওয়া দরকার।
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল নিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, দুই মেয়াদের বেশি একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কয়েকটি দল একই ব্যক্তি দুইবার প্রধানমন্ত্রী থাকার বিষয়টি বিবেচনা করার কথা বলেছে। অন্যান্য আরও কিছু প্রস্তাবও এসেছে। আমরা এই আলোচনা অব্যাহত রাখব এবং আগামী রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় আবার আলোচনা শুরু করব। আমরা আশা করব এ সপ্তাহে যেসব বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে, সেগুলো প্রথমে আলোচনা করব। কিন্তু যেগুলো একমত হবে না তার ভবিষ্যৎ কী হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী অনেকগুলো বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব। সব বিষয়ে আমরা একমত হতে পারব না সেটা আগেও বলেছি। তারপরও যেগুলো উল্লেখযোগ্য বিষয়ে একমত হতে পারব না, সেগুলো আমরা ইতিবাচকভাবে তুলে ধরব। আমরা আশা করব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে আমরা একমত হতে পারব।
বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নায়েবে আমির আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, সংসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হলে এবং নারী আসন ১০০ হলে উচ্চকক্ষ এবং নিম্নকক্ষ মিলিয়ে ৫০০ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অনেকে আবার জেলা পরিষদ এবং সিটি করপোরেশন মিলিয়ে আরও অতিরিক্ত ৭৬ ভোট অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রক্রিয়া যা-ই হোক, আমরা এক্সটেন্ডেড ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিকে সমর্থন করি। পাশাপাশি গোপন ব্যালটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য সুপারিশ করেছি। জামায়াতের সব অভ্যন্তরীণ নির্বাচন গোপন ব্যালটে হয়; দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনও সেভাবেই হওয়া উচিত।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রসঙ্গে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা চলছে। অনেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইউনিয়ন পরিষদকেও অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছেন। এতে করে ৫৭৬ ভোটের বাইরে আরো ৭০ হাজার অতিরিক্ত ভোট যুক্ত হবে।
কমিশনের নিরপেক্ষতার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, এখনো দু-একটি দলের প্রতি কমিশনের দুর্বলতা দেখা যায়। এটা পরিবর্তন করতে হবে। এ ছাড়া আলোচনায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকা ১৪ দলের কয়েকটি শরিক দলকে আমন্ত্রণ করেছে কমিশন। ফ্যাসিস্টদের সঙ্গ দেওয়া কোনো দলকে আমরা সমর্থন জানাব না।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রসঙ্গে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন বিষয়ে আমরা একমত এবং এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে ছাড় দিতে পর্যন্ত রাজি আছি।
রাজনৈতিক দলগুলো জানায়, সংবিধানের ৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হলে এবং গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট হলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আগের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর হবে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্যের ওপর জোর দেন তারা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin
কমেন্ট বক্স