ঢাকা , মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫ , ৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

‘ঈদে সবাই আনন্দ করবে আর হামার বাচ্চারা ভাতে পাইবে না’

আপলোড সময় : ০৬-০৬-২০২৫ ০১:২১:২৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ০৬-০৬-২০২৫ ০১:২১:২৪ পূর্বাহ্ন
‘ঈদে সবাই আনন্দ করবে আর হামার বাচ্চারা ভাতে পাইবে না’
‘ঈদ আসছে বাবা মানুষের ছাওয়ার (ছেলেরা) আনন্দ করবে আর হামার (আমার) বাচ্চারা (ছেলেরা) ভাতে পাইবে না! তিন বেলা তিন মুটি (মুঠো) যে খাবে তার চাল নাই! তরকারি কিনার পাইসা (পয়সা) নাই। হুরকা (বাতাস) আসলে প্লাস্টিকের ঘরখানা যাবার চায় উড়ি (উড়ে)! ঘরত (ঘরে) থাকির পাংনা (পাইনা)। ঝরি (বৃষ্টি)  আসলে পানি পরে বাচ্চাটা (ছেলেটা) ঘুমির পায় না।’ কান্না জাড়িতকন্ঠে এই কথাগুলো বলছিলেন বৃদ্ধা হাজেরা বেগম। 

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারি ইউনিয়নের দক্ষিণ গড্ডিমারী এলাকায় ভূমিহীন হাজেরার বেগমের বাড়ি। পলিথিনে মোড়ানো ঝুপড়ি ঘরে কোনরকম মানবেতর জীবনযাপন করছেন হাজেরা ও তার ছোট্ট ছেলে হিমেল। 

বাঁশ ঝাড়ের নিচে পলিথিনে মোড়ানো ঝুপড়ি ঘরে থাকেন বৃদ্ধা হাজেরা বেগম। নিজের সম্পদ বলতে শুধু ওই পলিথিনের ঝুপড়ি ঘরটি ছাড়া কিছু নেই তার। বাঁশের পরিত্যক্ত কঞ্চি দিয়ে নষ্ট পলিথিন মুড়িয়ে কোনোরকমে বৃষ্টির পানি থেকে রেহাই পাওয়ার বৃথা চেষ্টা করে তিনি। তার ঝুপড়ি ঘরের ভেতরে বিছানায় শুয়েই দিনের বেলা সূর্যের আলো আর চাঁদনি রাতে জ্যোৎস্না দেখে হাজেরা। 

কয়েক বছর আগে হাজেরার স্বামী জোবেদ আলী মারা যাওয়ায় এক ছেলে হিমেলকে (১২) নিয়ে পলিথিনের ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। আর অভাবের তাড়নায় বড় ছেলে ঢাকায় মানুষের বাড়িতে কাজ করেন। সবার মাঝে ঈদের আনন্দ থাকলেও হাজেরা বেগমের মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে দুশ্চিন্তা। ঈদের পরেই হাজেরার পলিথিনে মোড়ানো ঘরটি সরাতে বলেছে জমির মালিক। মানুষের জমিতে আজ এখানে কাল ওখানে ঘর করেই চলছে হাজেরার যাযাবরি জীবন! বয়সের ভারে চোখে ঝাপসা দেখা হাজেরা মানুষের কাছে চেয়ে খেয়ে দিনপার করে তিনি।  

সরকার ভূমিহীনদের বসবাসের জন্য ঘর বরাদ্দ দিলেও বৃদ্ধা হাজেরার কপালে জোটেনি একটি ঘর। এলাকার সবার ঘরে বিদ্যুতের বাতি জ্বললেও হাজেরার ঘরে জ্বলে পুরনো কেরোসিন তেলের কুপি। একটু বাতাস হলেই নিভে যায় কুপির সেই আলো। বয়সের ভারে কোন কাজ করতে পারে না হাজেরা। তাই মানুষের বাড়ি বাড়ি চাল-ডাল সংগ্রহ করে কোন রকম চলে তার জীবন। 

প্রতিবেশী হাসান রাজিব বলেন, অনেক দিন ধরে অসহায় হাজেরা বেগম পলিথিনের ছাউনি দিয়ে কোন রকম আছে। একটু বাতাস হলেই উড়ে যেতে চায় তার ঝুপড়ি ঘরটি। ওনাকে সহযোগিতা করার কি কেউ নেই! তার মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকু সরকার যদি করে দেয় ভালো হত।

আরেক প্রতিবেশী আব্দুর রহিম বলেন, বহুদিন আগে হাজেরার স্বামী মারা গেছে। সে খুব কষ্ট করে সন্তানদের নিয়ে পলিথিনের ঝুপড়িতে থাকেন। সবাই যদি একটু সহযোগিতা করে তাহলে হাজরার উপকার হবে।

বৃদ্ধা হাজেরা বেগম বলেন, ঈদের পারে জমি মালিক জায়গা ছাড়ি (ছেড়ে) দিবার কইছে কোটে (কোথায়) যাইম বাচ্চা দুইটাক নিয়া সেই চিন্তা ঘুমে ধরে না। সরকার থাকি নাকি ১০ কেজি করে চাল দেয়ছে (দিচ্ছে) সবাই পাইলো মোর কপালে জুটলো না। সরকার যদি মোক দুই শতক বাড়ি করার জমি দিতো তাহলে বাচ্চাদের নিয়া থাকির পানুং হয়।

হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম মিঞা বলেন, হাজেরা বেগমের বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। খোঁজখবর নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা তাকে করা হবে।aax

নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ