ঢাকা , শনিবার, ৩১ মে ২০২৫ , ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

বাজেট সহায়তায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেবে জাপান

আপলোড সময় : ২৭-০৫-২০২৫ ১০:৩৮:৩৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৭-০৫-২০২৫ ১০:৩৮:৩৩ অপরাহ্ন
বাজেট সহায়তায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেবে জাপান
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে জাপান সফরে গেছেন। এই সফরে জাপান বাংলাদেশকে বাজট সাপোর্ট হিসেবে ৫০০ মিলিয়ন ডলার, রেল খাতের উন্নতিতে ২৫০ মিলিয়ন ডলার এবং অন্যান্য খাতে আরও ২৫০ মিলিয়ন ডলারসহ মোট ১ বিলিয়ন ডলার সাপোর্ট দেওয়ার কথা। প্রাথমিক অবস্থায় ১ লাখ বাংলাদেশিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষকর্মী হিসেবে গড়ে তুলে জাপান পাঠানো হবে। এছাড়া মাতারবাড়ি-মহেশখালীর ‘ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ’ (এমআইডিআই-মিডি) প্রকল্প নিয়ে জাপানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বিস্তারিত আলোচনা হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম মঙ্গলবার বলেন, আজ (মঙ্গলবার দিবাগত রাত বা বুধবার) রাত দুইটার সময়ে প্রধান উপদেষ্টা জাপান সফরে যাচ্ছেন। এটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি সফর। সেখানে নিক্কেই ফোরামে প্রধান উপদেষ্টা কথা বলবেন। এই ফোরামে এশিয়ার টপ লিডাররা আসেন, সেখানে কনক্লেভ (সম্মেলন) হয়। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও প্রধান উপদেষ্টা জাপানের জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলবেন। উন্নয়নধর্মী জাপানের দুইটি সংস্থা জাইকা ও জেট্রোর প্রধানদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হবে। 

এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারে প্রধান উপদেষ্টা কথা বলবেন। একটি হচ্ছে, হিউম্যান রিসোর্সের ওপর সেমিনার। এই সেমিনারের পুরোটাই ফোকাস হচ্ছে যে জাপানে কিভাবে বাংলাদেশি দক্ষ জনশক্তি আরো পাঠান যায়। প্রধান উপদেষ্টা কালকে (সোমবার) নাগরিক সেবার বৈঠকে বলেছেন যে আমাদের টার্গেট হচ্ছে প্রথমে এক লাখ বাংলাদেশিকে জাপানে পাঠানো। এটা কিভাবে পাঠানো হবে এবং কত দ্রুত পাঠানো যায়, এটা নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা হবে। এক্ষেত্রে আমাদের কোথায় কোথায় সমস্যা আছে, সেগুলো কত দ্রুত দুরভূত করা যায় এবং আমরা কিভাবে এই এক লাখ বাংলাদেশিকে আপাদত এবং তারপর আরো বেশি লোককে পাঠানো যায়। একটি বড় জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে যে ভাষা (জাপানি) শিক্ষা। দেখা যাচ্ছে যে আমাদের এখান থেকে যারা জাপান যাচ্ছেন তারা যে ল্যাঙ্গুয়েজটা শিখে যাচ্ছেন তা ইনএডুকেট। এতে তারা দক্ষ কর্মী হিসেবে কাজ পাচ্ছেন না। তাই ভাষাশিক্ষাটা কিভাবে দ্রুত প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়, জাপানে এটাকে বলে এনফোর, এখানে যারা ভাষা শিখছেন তারা হচ্ছে এন ফাইভ, আমরা যাতে এনফোর ভাষাশিক্ষাটা দিয়ে জাপানে বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠীকে পাঠাতে পারি সেজন্য বিস্তারিত আলাপ হবে।

প্রেস সচিব বলেন, দ্বিতীয় সেমিনারে আলোচনা হবে বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে। জাপানিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। ইতিমধ্যে আড়াই হাজার একর জমিতে জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা হয়েছে। সেখানে কী ধরনের সুবিধা দেওয়া হবে, সে বিষয়ে আলোচনা হবে। এই সেমিনারে প্রায় ৩০০ জন জাপানি বিনিয়োগকারী উপস্থিত থাকবেন। সেখানে প্রধান উপদেষ্টা বক্তৃতা দেবেন এবং তাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। এছাড়া, সফরে মাতারবাড়ি-মহেশখালীর ‘ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ’ (এমআইডিআই) প্রকল্প নিয়ে জাপানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হবে। ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, মিডি (মাতারবাড়ি-মহেশখালীর ‘ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ) প্রকল্প বাস্তবায়নে ২৮ দশমিক ৯৬৫ বিলিয়ন বা মোট ২৯ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। এই প্রকল্পের কিছু কিছু প্রকল্প নিয়ে (সবগুলো না), যেগুলো খুব প্রয়োজন এবং এখনই দরকার সেগুলো নিয়ে জাপানের উন্নয়নধর্মী সংস্থাগুলোর সঙ্গে এই সফরে আলাপ হবে। আশা করছি খুব ফ্রুটফুল একটি সফর হবে। মাতারবাড়িতে একটি পরিকল্পিত শহর হবে। সেখানে উৎপাদন ও সরবরাহের হাব হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অনেক বিনিয়োগ প্রয়োজন। এজন্য এই সফরের ফোকাসটা এখানে থাকবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রধান উপদেষ্টা জাপানের বিনিয়োগকারিদের সঙ্গে বিনিয়োগ ইস্যূতে কথা বলবেন। এই প্রকল্পের আওতায় ৬ লেনের হাইওয়ে, একাধিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ৬টি গভীর সমুদ্রবন্দর (ডিপ সি পোর্ট) নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। মাতারবাড়ি পোর্ট হবে এমন একটি বন্দর, যেখানে ২০ মিটার ড্রাফটবিশিষ্ট বড় কনটেইনার জাহাজ ভিড়তে পারবে, যা চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষে সম্ভব নয়। মাতারবাড়িকে কেন্দ্র করে আমাদের লক্ষ্য এটি একটি আন্তর্জাতিক লজিস্টিক ও এনার্জি হাবে রূপ দেওয়া—যেমনটি সিঙ্গাপুর বা দুবাই হয়েছে। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কাজও দ্রুত এগোচ্ছে, যাতে বিনিয়োগকারীরা সরাসরি কক্সবাজারে নেমে মাতারবাড়ি ও এমআইডিআই প্রকল্প এলাকায় যেতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, সফরে জাপানের বিভিন্ন ঋণ সংস্থা ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রধান উপদেষ্টা এই বৃহৎ বিনিয়োগ প্রকল্পগুলোর জন্য আর্থিক সহায়তা চাইবেন। বাংলাদেশ জাপান থেকে ৫০০ থেকে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার, বা সর্বোচ্চ ১ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা আশা করছে, যার মধ্যে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বাজেট সহায়তা হতে পারে। এছাড়া, সফরে একটি জাপানি বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান উপদেষ্টাকে সম্মাননা প্রদান করবে এবং আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, আশা করছি প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সাপোর্ট পাওয়া যাবে। যা সরাসরি বাজেট খাতে ব্যয় হবে। ২৫০ মিলিয়ন ডলারের সাপোর্ট আশা করছি রেল খাতের জন্য, বাকিটা অণ্য খাত থেকে আসবে।

দৈনিক সময়ের আলোর এই প্রতিবেদক জানতে চান যে জাপান ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে বাংলাদেশের সমর্থনের পুনরাবৃত্তি চায় কিনা এবং আঞ্চলিক পরিস্থিতি বিশেষ করে ভারত, চীন ও মিয়ানমার নিয়ে আলোচনা হবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, স্পেসিফিক কী আলোচনা হবে তা এখনই বলতে পারছি না। জাপান বাংলাদেশের বৃহৎ উন্নয়ন অংশীদার। বাংলাদেশে জাপানের প্রচুর বিনিয়োগ আছে। আমাদের সঙ্গে তাদের সম্পর্কটা সুগভীর হবে এবং নতুন উচ্চতায় যাবে এই সফরের মাধ্যমে, এইটুকু বলতে পারি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা ৩১ মে সকালে একটি ফ্লাইটে টোকিও হতে সিঙ্গাপুর হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করবেন এবং রাতে ঢাকায় অবতরণ করবেন।

নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ