ঢাকা , শনিবার, ৩১ মে ২০২৫ , ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন মা, এল ৯ সন্তানের মরদেহ

আপলোড সময় : ২৪-০৫-২০২৫ ০৭:১১:৩৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৪-০৫-২০২৫ ০৭:১১:৩৫ অপরাহ্ন
হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন মা, এল ৯ সন্তানের মরদেহ
আরও একটি হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী হল যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা। একজন চিকিৎসক, যিনি হাসপাতালে আহত ও নিহত ব্যক্তিদের সেবা দিতে দিনরাত কাজ করছিলেন। এমন সময় নিজের নয় সন্তানের পোড়া মরদেহ গ্রহণ করতে বাধ্য হলেন তিনি। এই ঘটনাটি ঘটেছে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে। ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিজের নয় সন্তানকে হারিয়েছেন ফিলিস্তিনি শিশু বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক।

ডা. আলা আল-নাজ্জার গাজার নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের আওতাধীন আল-তাহরির হাসপাতালে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত। শুক্রবার (২৩ মে) গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি হামলায় আহতদের চিকিৎসা করছিলেন তিনি। এমন সময় তার জীবনের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক মুহূর্তটি এসে উপস্থিত হয়। নিজের কর্তব্য পালনের সময় তিনি দেখতে পান, তার নিজের সন্তানদের মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে!

তাদের মধ্যে বড় সন্তানের বয়স ছিল ১২ এবং সবচেয়ে ছোট শিশুটির বয়স ছিল মাত্র ছয় মাস। বোমা হামলায় তারা সবাই মারাত্মকভাবে পুড়ে গিয়েছিল। নিহত সন্তানদের নাম- ইয়াহিয়া, রাকান, রুসলান, জুবরান, ঈভ, রেভান, সায়দেন, লুকমান ও সিদরা।

সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ডা. আলা আল-নাজ্জার তার স্বামী হামদি আল-নাজ্জারের সঙ্গে শুক্রবার সকালে প্রতিদিনের মত কর্মস্থলে রওনা হয়েছিলেন। তবে কিছুক্ষণ পর হামদি বাসায় ফিরে যান।

কিন্তু ভাগ্য নির্মমভাবে ওঁৎ পেতে ছিল। খান ইউনিসের দক্ষিণাঞ্চলের কিজান আল-নাজ্জার এলাকায় অবস্থিত তাদের বাড়িটি খুব শিগগিরই ইসরায়েলি বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। সেই হামলায় তাদের ১০ সন্তানের মধ্যে ৯ জনই নিহত হয়। এই হামলায় একমাত্র জীবিত সন্তানটিও মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং এখন চিকিৎসাধীন।

প্রতেবদনে বলা হয়েছে, ডা. আলার স্বামী গুরুতর আহত অবস্থায় এখনও ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, আগুনে জ্বলতে থাকা বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারকর্মীরা শিশুদের মরদেহ টেনে বের করছেন।

প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছিল। ধ্বংসস্তূপে উদ্ধারকারীরা চিৎকার করে জীবীতদের চিহ্ন খোঁজার চেষ্টা করছিলেন।

সিভিল ডিফেন্স টিম জানায়, প্রাথমিকভাবে সাতটি মরদেহ উদ্ধার করে নাসের হাসপাতালে পাঠানো হয়— যেখানে তাদের মা ডা. আলা কর্মরত।

অন্য দুটি মরদেহ পরবর্তীতে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়। এরমধ্যে একটি ছিল ছয় মাস বয়সী শিশুটির।

একইসঙ্গে মা, চিকিৎসক ডা. আলা : এক অবিচল নারী
ডা. আলা আল-নাজ্জার তার সর্বকনিষ্ঠ সন্তানের জন্মের মাত্র ছয় মাস পরেই কাজে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া নিয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।

ডা. আলার এই মর্মান্তিক গল্প শুধু একটি পারিবারিক ট্র্যাজেডি নয়, বরং এক অতুলনীয় মানবিকতার নিদর্শন। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ডা. ইউসুফ আবু আল-রিশ মিডল ইস্ট আইকে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘আমি জানতে পারি, ডা. আলা সার্জারি কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার একমাত্র জীবিত সন্তানের খোঁজে। দশ সন্তানের মধ্যে একমাত্র ওই সন্তানই বেঁচে ছিলেন। আমি দ্রুত সেখানে যাই। আমার মনে হচ্ছিল, আমি মানবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত দেখব— একজন চিকিৎসক, যিনি নিজের সন্তানদের রেখে এসেছেন গাজার সেই ধ্বংসস্তূপে, যেখানে শুধু কষ্টের কথাও বললে ব্যথা আরও বেড়ে যায়।’ 

তিনি আরও বলেন, তিনি তাদের (নিজের সন্তানদের) এক অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখে গিয়েছিলেন। কারণ তার আরও বড় কর্তব্য ছিল সেই সব অসুস্থ শিশুদের প্রতি, যাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। শুধু নাসের হাসপাতালটি একমাত্র স্থান, যা নির্দোষ আত্মাদের আর্তচিৎকারে পূর্ণ হয়ে আছে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ