রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সবচেয়ে বড় বন্দি বিনিময়
আপলোড সময় :
২৪-০৫-২০২৫ ১১:২৬:১০ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় :
২৪-০৫-২০২৫ ১১:২৬:১০ পূর্বাহ্ন
যুদ্ধ শুরুর পর সর্ববৃহৎ বন্দি বিনিময় করেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। শুক্রবার (২৩ মে) উভয় দেশই সামরিক-বেসামরিক ৭৮০ জন যুদ্ধবন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। খবর রয়টার্সের
শুক্রবার ছাড়া পাওয়া এই যুদ্ধবন্দিদের অর্ধেক অর্থাৎ ৩৯০ জন ইউক্রেনের, বাকি অর্ধেক রাশিয়ার। উভয় দেশই ২৭০ জন করে সামরিক এবং ১২০ জন করে বেসামরিক বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি তুরস্কে দুই দেশের সরকারি প্রতিনিধিদের মধ্যে হওয়া সংলাপে মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে যেসব সমঝোতা হয়েছে, সেসবের আওতায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এই যুদ্ধবন্দিদের। তুরস্কের বৈঠকে উভয় দেশের ৫০০ জন করে মোট ১ হাজার যুদ্ধবন্দির মুক্তির ব্যাপারে সম্মত হয়েছিল রাশিয়া ও ইউক্রেন। তাদের মধ্যে শুক্রবার মুক্তি পেলেন ৭৮০ জন। আজ শনিবার ও আগামীকাল রোববার বাকি ২২০ জনকে ছেড়ে ও দেওয়া হবে।
গতকাল যে ৩৯০ জন ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিকে মুক্তি দিয়েছে মস্কো, তাদের একজন ওলেক্সান্দার নেহির ইউক্রেনীয় বাহিনীর একজন সেনা সদস্য। তার স্ত্রী এ সময় উপস্থিত ছিলেন। মুক্তির পর ইউক্রেনের সুমি শহরের বাসিন্দা নেহির রয়টার্সকে বলেন, “আমাকে যে আজ মুক্তি দেওয়া হচ্ছে—আমার স্ত্রীকে জানানো হয়নি। এমনিতে কারা কর্তৃপক্ষ প্রতি শুক্রবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ করতে দেয়। সে আমার সঙ্গে আজ ওই সাপ্তাহিক সাক্ষাৎ করতেই এসেছিল।”
“এসে যখন দেখল যে আমি মুক্তি পেয়েছি, সে খুশিতে প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। বিষয়টি ঠিক কেমন—আপনি যদি কখনও এ ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে না যান, তাহলে আপনাকে তা বলে বোঝানো কঠিন। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, কখনও বিশ্বাস হারানো চলবে না, নিরাশ বা হতাশ হওয়া চলবে না।”
৯ মাস আগে ইউক্রেনের খেরসন প্রদেশে দেশটির সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি হয়েছিলেন রুশ বাহিনীর সেনাসদস্য ওলেকসান্দার তারাসোভ। শুক্রবার যে ৩৯০ জন রুশ যুদ্ধবন্দিকে মুক্তি দিয়েছে তাদের মধ্যে তারাসোভও একজন।
রয়টার্সকে তারাসোভ বলেন, “আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমি মুক্তি পেয়েছি।”
যুদ্ধবন্দিদের মুক্তিদানের ব্যাপারটিকে স্বাগত জানিয়েছেন এ যুদ্ধের প্রধান মধ্যস্থতাকারী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। শুক্রবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করা এক বার্তায় ট্রাম্প বলেন, “মস্কো-কিয়েভ উভয়পক্ষের সমঝোতাকে স্বাগত। এই সমঝোতা কি অদূর ভবিষ্যতে আমাদেরকে বড় কোনো সুসংবাদের দিকে নিয়ে যাবে?”
এত বড় সংখ্যায় বেসামরিক বন্দি এর আগে কোনো বিনিময়ে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এই বন্দি বিনিময়ের সমঝোতা হয়েছিল তুরস্কে, যেখানে ইউক্রেন ও রাশিয়ার নিম্নপর্যায়ের প্রতিনিধিরা ২০২২ সালের মার্চের পর প্রথম মুখোমুখি হন, যদিও বৈঠকটি মাত্র দুই ঘণ্টা স্থায়ী হয় এবং যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ শুক্রবার জানান, দ্বিতীয় দফা বৈঠক হবে এবং তখন রাশিয়া একটি ‘মেমোরেন্ডাম’ ইউক্রেনীয় পক্ষকে দেবে। এদিকে ট্রাম্প বলেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন ‘তাৎক্ষণিকভাবে’ যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় বসবে বলে তিনি আশা করেন, যা তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দুই ঘণ্টার ফোনালাপের পর উল্লেখ করেন।
তবে জেলেনস্কি পুতিনকে অভিযুক্ত করেছেন ‘সময় কেনার চেষ্টা’ করার মাধ্যমে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ভ্যাটিকানের মধ্যস্থতার সম্ভাবনাকে সমর্থন দিলেও লাভরভ একে ‘বাস্তবসম্মত নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন। লাভরভ আবারো একটি ভিত্তিহীন দাবি করে বলেছেন, জেলেনস্কি বৈধ রাষ্ট্রপ্রধান নন এবং নতুন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত শান্তি চুক্তির আলোচনা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘প্রথমে একটি চুক্তি করতে হবে। তারপর দেখা যাবে কারা ইউক্রেনে বৈধভাবে ক্ষমতায় আছেন। মূল লক্ষ্য হচ্ছে এমন একটি চুক্তি তৈরি করা যা দীর্ঘমেয়াদে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে—বিশেষত রাশিয়ার জন্য।’
নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin
কমেন্ট বক্স